Latest Post

Friday, July 27, 2012

অ-নামিকা


-নামিকা
     তোমারে বন্দনা করি
      স্বপ্ন-সহচরী
     লো আমার অনাগত প্রিয়া,
   আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!
      তোমারে বন্দনা করি….
     হে আমার মানস-রঙ্গিণী,
   অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী!
      তোমারে বন্দনা করি….
   নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা!
   আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা….
     গোপণ-চারিণী মোর, লো চির-প্রেয়সী!
   সৃষ্টি-দিন তে কাঁদবাসনার অন্তরালে বসি’-
      ধরা নাহি দিলে দেহে।
   তোমার কল্যাণ-দীপ জ্বলিলে না
     দীপ-নেভা বেড়া-দেওয়া গেহে।
   অসীমা! এলে না তুমি সীমারেখা-পারে!
   স্বপনে পাইয়া তোমাস্বপনে হারাই বারে বারে
   অরুপা লো! রহি য়ে এলে মনে,
     সতী য়ে এলে না ঘরে।
   প্রিয় য়ে এলে প্রেমে,
     বধূ হয়ে এলে না অধরে!
   দ্রাক্ষা-বুকে রহিলে গোপনে তুমি শিরীন্শরাব,
   পেয়ালায় নাহি এলে!-
     ‘উতারো নেকার’-
      হাঁকে মোর দুরন্ত কামনা!
   সুদুরিকা! দূরে থাক’-ভালোবাসা-নিকটে এসো না
   তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা।
     তুমি মরীচিকা,
     তুমি জ্যোতি।-
   জন্ম-জন্মান্তর ধরিলোকে-লোকান্তরে তোমাকরেছি আরতি,
    বারে বারে  একই জন্মে শতবার করি!
   যেখানে দেখেছি রূপ,-করেছি বন্দনা প্রিয়া তোমারেই স্মরি
     রূপে রূপে, অপরূপা, খুঁজেছি তোমায়,
     পবনের যবনিকা যত তুলি তত বেড়ে যায়!
   বিরহের কান্না-ধোওয়া তৃপ্ত হিয়া ভরি
   বারে বারে উদিয়াছ ইন্দ্রধনুসমা,
      হাওয়া-পরী
      প্রিয় মনোরমা!
   ধরিতে গিয়োছি-তুমি মিলায়েছ দূর দিগ্বলয়ে
   ব্যথা-দেওয়া রাণী মোরএলে না কথা কওয়া য়ে
   চির-দূরে  থাকা ওগো চির-নাহি-আসা!
   তোমারে দেহের তীরে পাবার দুরাশা
     গ্রহ তে গ্রহান্তরে য়ে যায় মোরে!
   বাসনার বিপুল আগ্রহে-
     জন্ম লভি লোকে-লোকান্তরে!
   উদ্বেলিত বুকে মোর অতৃপ্ত যৌবন-ক্ষুধা
       উদগ্র কামনা,
     জন্ম তাই লভি বারে বারে,
      না-পাওয়ার করি আরাধনা!….
   যা-কিছু সুন্দর হেরিরেছি চুম্বন,
    যা-কিছু চুম্বন দিয়া রেছি সুন্দর-
   সে-সবার মাঝে যেন তব হরষণ
    অনুভব করিয়াছি!-ছুঁয়েছি অধর
   তিলোত্তমা, তিলে তিলে!
     তোমারে যে করেছি চুম্বন
   প্রতি তরুণীর ঠোঁটে
     প্রকাশ গোপন
   যে কেহ প্রিয়ারে তার চুম্বিয়াছে ঘুম-ভাঙা রাতে,
    রাত্রি-জাগা তন্দ্রা-লাগা ঘুম-পাওয়া প্রাতে,
   সকলের সাথে আমি চুমিয়াছি তোমা
   সকলের ঠোঁটে যেন, হে নিখিল-প্রিয়া প্রিয়তমা!
   তরু, লতা, পশু, পাখী, সকলের  কামনার সাথে
   আমার কামনা জাগে,-আমি রমি বিশ্ব-কামনাতে!
   বঞ্চিত যাহারা প্রেমে, ভুঞ্জে যারা রতি-
   সকলের মাঝে আমি-সকলের প্রেমে মোর গতি!
   যে-দিন স্রষ্টার বুকে জেগেছিল আদি সৃষ্টি-কাম,
   সেই দিন স্রষ্টা সাথে তুমি এলে, আমি আসিলাম।
     আমি কাম, তুমি লে রতি,
   তরুণ-তরুণী বুকে নিত্য তাই আমাদের অপরূপ গতি!
   কী যে তুমি, কী যে নহ, কত ভাবি-কত দিকে চাই!
   নামে নামে, -নামিকা, তোমারে কি খুঁজিনু বৃথাই?
   বৃথাই বাসিনু ভালো? বৃথা সবে ভালোবাসে মোরে?
   তুমি ভেবে যারে বুকে চেপে ধরি সে- যায় রে।
     কেন হেন হয়, হায়, কেন লয় মনে-
   যারে ভালো বাসিলাম, তারো চেয়ে ভালো কেহ
বাসিছে গোপনে
    সে বুঝি সুন্দরতর-আরো আরো মধু!
    আমারি বধূর বুকে হাসো তুমি য়ে নববধূ।
     বুকে যারে পাই, হায়,
     তারি বুকে তাহারি শয্যায়
   নাহি-পাওয়া য়ে তুমি কাঁদ একাকিনী,
     ওগো মোর প্রিয়ার সতিনী।….
   বারে বারে পাইলাম-বারে বারে মন যেন কহে-
     নহে, সে নহে!
   কুহেলিকা! কোথা তুমি? দেখা পাব কবে?
   জন্মেছিলে জন্মিয়াছ কিম্বা জন্ম লবে?
     কথা কও, কও কথা প্রিয়া,
   হে আমার যুগে-যুগে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!
   কহিবে না কথা তুমি! আজ মনে হয়,
   প্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়।
     জন্ম যার কামনার বীজে
   কামনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে।
   দিকে দিকে শাখা তার করে অভিযান,
    যেন শুষিয়া নেবে আকাশের যত বায়ু প্রাণ।
     আকাশ ঢেকেছে তার পাখা
     কামনার সবুজ বলাকা!
   প্রেম সত্যপ্রেম-পাত্র বহু-আগণন,
   তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন।
     মদ সত্য, পাত্র সত্য নয়!
   যে-পাত্রে ঢালিয়া খাও সেই নেশা হয়!
      চির-সহচরী!
     এতদিনে পরিচয় পেনু, মরি মরি!
     আমারি প্রেমের মাঝে রয়েছ গোপন,
   বৃথা আমি খুঁজে মরিজন্মে জন্মে করিনু রোদন।
     প্রতি রূপে, অপরূপা, ডাক তুমি,
      চিনেছি তোমায়,
     যাহারে বাসিব ভালো-সে- তুমি,
      ধরা দেবে তায়!
     প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু,
   বহু পাত্রে ঢেলে পি সেই প্রেম-
      সে শরাব লোহু।
   তোমারে করিব পান, -নামিকা, শত কামনায়,
     ভৃঙ্গারে, গোলাসে কভু, কভু পেয়ালায়!
Read more ...

গোপন-প্রিয়া


               গোপন-প্রিয়া
   পাইনি লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
   মধ্যে সাগর, -পার -পার করছি কানাকানি!
     আমি -পার, তুমি -পার,
     মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
   -পার তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
   আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।
  
   নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
   আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
     এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
     আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
   আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার রলো না কূল ক্ষয়,
   কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
   চেনার বন্ধুপেলাম না জানার অবসর।
   গানের পাখী সেছিলাম দুদিন শাখারপর।
     গান ফুরালো  যাব যবে
     গানের কথাই মনে রবে,
   পাখী তখন থাকবো না ’-থাকবে পাখীর ¯^i,
   উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
  
   তোমার পারে বাজ্ কখন আমার পারের ঢেউ,
   অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না কেউ।
     উড়তে গিয়ে পাখা তে
     একটি পালক ড়লে পথে
   ভুলেপ্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
   ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে -!
  
   বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
   ঝুরবে তুমি এক্লা মনে, বনের কেতকী?
     মনের মনে নিশীথ্‌-রাতে
     চুম্দেবে কি কল্পনাতে?
   স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
   মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
  
   দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই কাঁদন-রোল!
   কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
     তোমায় পেলে থাম্ বাঁশী,
     আস্ মরণ সর্বনাশী।
   পাইনি তাই রে আছে আমার বুকের কোল।
   বেণুর হিয়া শূন্য লে উঠবে বাঁশীর বোল
   বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
   দূরে যত রও হিয়ার তত নিকট হও।
     থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
     মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
   যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
   শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
  
   ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
   তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
     কোথায় আছ কেম্নে রাণি
     কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
   ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
   চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
  
   রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
   নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
     দুখের সুরায় মস্ত্য়ে
     থাকবে -প্রাণ তোমায় য়ে,
   কল্পনাতে আঁক্ তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
   ঘুমে জাগায় জড়িয়ে বে, সেই তো চরম সুখ!
  
   গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
   থাম্বে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
     শিল্পী আমি, আমি কবি,
     তুমি আমার আঁকা ছবি,
   আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
   চাইব না ’, পরান রে রে যাব দান
   তোমার বুকে স্থান কোথা গো দূর-বিরহীর,
   কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
     গোপন তুমি আস্লে নেমে
     কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
   এই-সে সুখে থাক্বে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
   দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না- বাঁধিলাম নীড়!
   বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
   মনে আমায় রবে না ’-সেই তো মনে স্থান!
     যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
     কর্বে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
   ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
   নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!
Read more ...

Contact Form

Name

Email *

Message *

Designed By - Nazim Mon | Mob:01820256327